আসসালামু আলাইকুম সুপ্রিম পাঠক। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় “জুমার নামাজ মোট কত রাকাত – জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম “।এছাড়াও আলোচনায় থাকছে:- জুমার নামাজ কত রাকাত,জুমার নামাজের নিয়ত,জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম,জুমার নামাজ ফরজ না ওয়াজিব ইত্যাদি।
জুমার নামাজ কি
আরো পড়ুন:- আল আকসা মসজিদের ইতিহাস
জুমার নামাজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নামাজ। আরবি শব্দ “জুমআহ’র ” অর্থ একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবন্ধ হওয়া। সপ্তাহের নিদিষ্ট একটি দিনে মুসলমান ব্যক্তিরা নিদিষ্ট সময়ে, একটি নিদিষ্ট স্থানে একত্রিত হয়ে জামায়াতের সাথে যোহরের নামাজের পরিবর্তে দুই রাকাত নামাজ ফরজরুপে আদায় করে, তাকে জুমআহ’র নামাজ বলে। জুমার নামাজ আর জোহরের নামাজ একই সময় হলেও নিয়তগত পার্থক্য রয়েছে।
জুমার নামাজের ইতিহাস
আমাদের নবি হযরত মোহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় গেলেন,মদিনায় পৌচ্ছানোর দিন টা ছিল শুক্রবার। সেদিন হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলি সালেম গোত্রের উপত্যকায় গেলে সেখানে যোহরের নামাজের সময় হয়। তখন হযরত মোহাম্মদ (সা.) যোহরের নামাজের পরিবর্তে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম জুমার নামাজ। তবে জুমার নামাজের আনুষ্ঠানিক সুচনাটা আরো পরে হয়।
হযরত মোহাম্মদ (স.) মদিনায় যাওয়ার পর এবং জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে মদিনার আনসার সাহাবিরা ুএকদিন আলোচনা করতে বসে। সাহাবিরা বলেন, ইহুদিদের সপ্তাহে ুএকটি নিদিষ্ট দিন রয়েছে, নাসারারাও দেরও সপ্তাহে নিদিষ্ট একটি দিন রয়েছে। এই দিন তারা সবাই একত্র হয়, সুতরাং আমাদেরও সপ্তাহে একটি নিদিষ্ট দিন থাকা প্রয়োজন, সেদিন আমরা সবাই একত্রিত হয়ে আল্লাহ কে স্মরণ করব, নামাজ আদায় করব। অবশেষে তারা শুক্রবার কে নির্বাচিত করলেন, এবং নাম করণ করলেন জুমার দিন।
আরো পড়ুন:- আল আসকা মসজিদের ইতিহাস
জুমার নামাজ কত রাকাত ও কি কি
জুমার নামাজ মোট ১০ রাকাত। ২ রাকাত ফরজ নামাজ এবং ফরজ নামাজের আগে ৪ রাকাত কাবলাল জুমা ও ফরজ নামাজের পর ৪ রাকাত বাদাল জুমা (সুন্নত নামাজ) আদায় করতে হয়। এছাড়াও ব্যক্তি চাইলে, জোহরের নামাজের মত নফল নামাজ আদায় করতে পারে, এসব নফল নামাজ জুমার অংশ হিসেবে পড়া হয় না, না পড়লেও দোষের কিছু না।
- কাবলাল জুমা ৪ রাকাত।
- ফরজ নামাজ ২ রাকাত।
- বাদাল জুমা ৪ রাকাত।
জুমার নামাজের নিয়ত
জুমার নামাজের নিয়ত বাংলায় দেওয়া হলো।
কাবলাল জুমা: আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কেবলামুখী হয়ে ৪ রাকাত কাবলাল জুমার নামাজ আদায় করার নিয়ত করিলাম। আল্লাহু আকবর।
ফরজ নামাজ: আমার ওপর জোহরের ফরজ নামাজ আদায় করার যে দায়িত্ব আছে,আমি কেবলামুখী হয়ে, জুমার ২ রাকাত ফরজ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তা পালন করার নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।
বাদাল জুমা: আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কেবলামুখী হয়ে ৪ রাকাত বাদাল জুমার নামাজ আদায় করার নিয়ত করিলাম। আল্লাহু আকবর।
জুমার নামাজ ফরজ না ওয়াজিব
জুমার ২ রাকাত নামাজ যা খুৎবার পর পড়া হয়, তা ফরজ নামাজ। আর খুৎবা শোনা ওয়াজিব। তবে খুৎবার আগে এবং ফরজ নামাজের পরে সুন্নত ও নফল নামাজ আদায় করা হয়।
জুমার নামাজের ফজিলত
জুমার নামাজ মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। জমার নামাজ আদায় না করলে হাদিসে ভয়াবহ ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। জুমার নামাজ সম্পর্কে নবীজি বলেন- ” জুমা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ দিবস”। জুমা নামাজ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সুরা আল জুমায় আল্লাহ বলেন:- ” মুমিনগন! জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ত্বরা করা এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ “। (আয়াত: ৯ )
যে সবার আগে জুমার দিন মসজিদে প্রবেশ করে, সে আল্লাহর রাস্তায় একটি উট দান করার সওয়াব পাবে। যে দুই নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি গরু দান করার সওয়াব পাবে। যে ৩ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি ছাগল দান করার সওয়াব পাবে। যে ৪ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি মুড়গি দান করার সওয়াব লাভ করে এবং যে ৫ নম্বরে প্রবেশ করে সে একটি ডিম দান করাড সওয়াব লাভ করে। (মুসনাদে শাফি:৬২, জামে লি ইবনে ওহাব : ২২৯, মুসনাদে হুমাইদি : ৯৬৩)।
হজরত সালমান (রা.) হতে একটি হাদিস বর্ণিত। হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুন্দর করে গোসল করবে, তারপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে, এতপর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না। সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগ সহকারে তার খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মুসনাদে আবু দাউদ : ৪৭৯)।
আরো পড়ুন:- আল আকসা মসজিদের ইতিহাস