আসসালামু আলাইকুম সুপ্রিম পাঠক। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় “দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান”। আপনি যদি দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেল টি পড়তে শুরু করে থাকেন, তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজ দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হবে। আলোচনায় উত্তর বঙ্গের জেলা দিনাজপুরের ৬ টি দর্শনীয় স্থান থাকবে। আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষপর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রেখে শুরু করছি।
দিনাজপুর জেলা
রংপুর বিভাবগের উত্তর-পশ্চিমান্চলের একটি জেলা দিনাজপুর। উত্তর বঙ্গের ১৬ টি জেলার মধ্যে আয়তনে বৃহত্তম জেলা দিনাজপুর। দিনাজপুর জেলার উপজেলার সংখ্যা অনুযায়ী একটি “এ” শ্রেণি ভুক্ত জেলা। রংপুর বিভাগের অন্তর্ভুক্ত দিনাজপুর জেলাটি আবহমান কাল ধরে ধারণ করতে আসছে উত্তর বঙ্গের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। ১৭৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত জেলাটিতে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঘুরতে। আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো।
দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান গুলো কি কি?
- রামসাগর দিঘি।
- কান্তজির মন্দির।
- নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান।
- দিনাজপুর রাজবাড়ী।
- স্বপ্ন পুরী।
- সিংড়া জাতীয় উদ্যান।
দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান রামসাগর দিঘি
রামসাগর দিঘি দিনাজপুর জেলার তাজপুর গ্রামে অবস্থিত। রামসাগর কে বাংলাদেশের বৃহত্তম কৃত্রিম দিঘি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পলাশি বিপ্লবের কিছু আগে রাজা রামনাথ তার রাজ্যের পানির চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে দীঘিটি খনন করেন। পরে রাজা রামনাথের নাম অনুযায়ী দিঘি টি রামসাগর নামে পরিচিত লাভ করে। বর্তমানে রামসাগর দিনাজপুর জেলা পর্যটন বিভাগের দায়িত্বে আছে। দিনাজপুর জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রামসাগর দিঘি অন্যতম। দিনাজপুর জেলার শহর থেকে রামসাগর দিঘি তে অটোরিক্সায় যেতে ২০-৩০ মিটিট সময় লাগে। দীঘিটির আয়ত ৪ লক্ষ ৩৭ হাজার ৪৯২ বর্গ কি.মি.। রামসাগর দিঘির গভীরতা প্রায় ১০ মিটার।
দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান কান্তজির মন্দির
কান্তজির মন্দির দিনাজপুর জেলার টেপা নদীর তীরে কান্তনগর নামে গ্রামে অবস্থিত। কান্তজির মন্দির এছাড়াও কান্তজিউ মন্দির বা নবরত্ন মন্দির নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের এই বিখ্যাত স্থাপনাটি রাজা প্রাণ নাথ শ্রীকৃষ্ণ ও তার স্ত্রী রুক্মিণী কে উৎসর্গ করে নির্মাণ করেন। ঐতিহ্য বহন কারী এই মন্দির টির কাজ শুরু করন ১৭০৪ সালে এবং নির্মাণ কাজ শেষ করেন তার পুত্র ১৭৫২ সালে। নির্মাণের পর থেকে মন্দিটির উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট কিন্তু ১৮৯৭ সালে ভুমিকম্পের ক্ষতির কারণে এখন বর্তমান মন্দিরটির উচ্চতা ৫০ ফুট। দিনাজপুর জেলা শহর থেকে অটো রিক্সায় করে সহজেই কান্তজির মন্দিরে পৌছানো যায়।
দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান
দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার ৫১৮ হেক্টর আয়তনের জাতীয় বনটি বর্তমানে শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান নামে পরিচিত। ২৪ অক্টোবর, ২০১০ সালে বনটি জাতীয় বন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। চারপাশে বন এবং মাঝখানে প্রায় ৬০০ একর আশুরার বিল দেশীয় মাসের অভয়াশ্রম। এই বিলের উপর নির্মিত হয়েছে উত্তর বঙ্গের সবচেয়ে বড় কাঠের ব্রিজ। দিনাজপুর জেলার দর্শনী স্থানগুলোর মধ্যে আরশুরার বিল অন্যতম। এখানে হাজার হাজার মানুষ ঘুরতে আসে। দিনাজপুর জেলার নবাবগন্জ উপজেলা শহর থেকে অটো রিক্সায় ২০ টাকায় পৌছানো যায় বিলটিতে।
দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান ( দিনাজপুর রাজবাড়ী)
বাংলাদেশের এই বিখ্যাত রাজবাড়ী টি রংপুর বিভাগের অন্তর্ভুক্ত দিনাজপুর জেলার উত্তর-পুর্ব দিকে অবস্থিত। রাজবাটী গ্রামের কাছে এই স্থাপনাটি “রাজ বাটিকা” নামে পরিচিত। উল্লেখ যে, রাজ বাটিকার নাম অনুযায়ী গ্রামের নাম করণ করা হয়েছে। দিনাজপুর জেলার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে পূর্বদিকে অবস্থিত।
দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান স্বপ্নপুরী
দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগন্জে অবস্থিত এই বিনোদন পার্কটির। এটিই উত্তর বঙ্গের সরচেয়ে সুন্দর বিনোদন পার্ক। স্বপ্নপুরীতে রয়েছে মৎস জগৎ, চিড়িয়াখানা, ঘোড়ার গাড়ি, রেল গাড়ি, বাংলাদেশের মানচিত্র, নানা প্রজাতির গাছ পালা, স্পিড বোর্ড, রাত্রি যাপনের জন্য আবাসিক হোটেল, কৃত্রিম সৌর জগৎ, বরফের দেশ, ভুতেবাড়ি ইত্যাদি। স্বপ্নপুরী উপভোগ করতে হলে জন প্রতিটি ১০০ টাকা টিকিট সংগ্রহ করে প্রবেশ করতে হবে। দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলা ও নবাবগঞ্জ উপজেলা থেকে যেকোনো দেশীয় যাম বহনে করে ৩০ মিনিটেই স্বপ্নপুরীতে পৌছানো সম্ভব। স্বপ্নপুরীর বর্তমান মালিক দিনাজপুর -৬ আসনের মাননীয় এমপি শিবলী সাদিক। স্বপ্নপুরীর নির্মাণ কাজ শুরু করেন তার পিতা ১৯৮৯ সালে। এই কৃত্রিম বিনোদন পার্কটি প্রায় ৪০০ একর জায়গায় জুড়িয়ে বিস্তৃত।
দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান সিংড়া জাতীয় উদ্যান
সিংড়া জাতীয় উদ্যান উত্তর বঙ্গের জেলা দিনাজপুরে অবস্থিত একটি সংরক্ষিত বনাঞল। সিংড়া জাতীয় উদ্যান স্থানীয় ভাবে সিংড়া শালবন নামে অধিক পরিচিত। দিনাজপুর জেলা শহর থেকে ৪০ কি.মি. উত্তরের উপজেলা বীরগঞ্জ উপজেলা থেকে ১৫ কি.মি দুরে ভোগণগর ইউনিয়নে এটি অবস্থিত। সিংড়া শালবনের আয়ত ৩৫৫ হেক্টর তবে জাতীয় বনের পরিমাণ ৩০৫ হেক্টর। ১০ অক্টোবর, ২০১০ সালে বন বিভাগ এই বনকে জাতীয় বন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সিংড়া জাতীয় উদ্যানের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে নর্ত নদী।এখনে ঘুরতে আসা পর্যটকদের সুধিবার কথা বিবেচনা করে ছোট পরিসরে একটি রেস্ট হাউজ ও দুইটি পিকনিক স্টপ স্থাপন করা হয়েছে। শীতের মৌসুমে এখানে বেশি পর্যটক আসেন।
দিনাজপুরের বিখ্যাত ব্যক্তি
- হাজী মোহাম্মদ দানেশ – অবিভক্ত বাংলার ব্রিটিশ আমলের ুএকজন কৃষক নেতা।
- লিটন দাস- বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট টিমের একজন খেলোয়াড়।
- অধ্যাপক ইউসুফ আলী- বাংলাদেশের স্বাধীনতা সনদ পাঠক ও বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী।
- শিবলী সাদিক – দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জে জন্মগ্রহণ করা একজন রাজনীতিবিদ। তিনি বর্তমান স্বপ্নপুরীর মালিক এবং দিনাজপুর -৬ আসনের এমপি।
- জাম্বু- একজন বাংলাদেশী অভিনেতা।
- সুভাষ দত্ত – একজন বাংলাদেশী চলচিত্রশিল্পী, নির্তামা।
- নিতুন কুন্ডু – বাংলাদেশের চিত্রশিল্পী, ভাস্কর ও মুক্তিযোদ্ধা।
- খালেদা জিয়া – বাংলাদেশের সাবেক ও প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।
- এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার – দিনাজপুর ৫ আসনের এমপি।
দিনাজপুরের বিখ্যাত খাবার
দিনাজপুর জেলার বিখ্যাত খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে সিদল, বুট বিরিয়ানি, মহাজনি মিস্টি পোলাও, পেলকা,সিদল ভর্তা,পাপড়, রসুন দিয়ে মাংস ও আলুর ডাল দিয়ে ডিম ইত্যাদি।
দিনাজপুর জেলা সম্পর্কে আরো কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
স্বপ্নপুরীর মালিকের নাম কি?
উত্তর: স্বপ্নপুরী বিনোদন পার্কের বর্তমান মালিক দিনাজপুর -৬ আসনের মাননীয় এমপি শিবলী সাদিক।
রংপুর থেকে দিনাজপুর কত কি মি?
উত্তর: উত্তর বঙ্গের বিভাগীয় শহর রংপুর থেকে দিনাজপুর জেলা শহরের দুরত্ব ৭৪.২ কি.মি।
দিনাজপুর কত বর্গ কিলোমিটার?
উত্তর: উত্তর বঙ্গের ১৬ জেলার মধ্যে আয়তনে সর্ব বৃহৎ জেলা দিনাজপুরের আয়তন ৩৪৩৮ বর্গ কি.মি।
দিনাজপুর জেলা কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: উত্তর বঙ্গের এই ঐতিহ্য বাহী জেলাটি ১৭৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।