আসসালামু আলাইকুম সুপ্রিম পাঠক। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ” রংপুরের দর্শনীয় স্থান”।রংপুর শহরের ৭ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আজ বিস্তারিত আলোচনা থাকবে ইনশাল্লাহ। এছাড়াও আলোচনায় থাকবে:- রংপুর কিসের জন্য বিখ্যাত,রংপুর বিভাগের জেলা সমূহ,রংপুরের বিখ্যাত খাবার কি ও রংপুরের বিখ্যাত ব্যক্তি ইত্যাদি।
রংপুরের দর্শনীয় স্থান গুলো কি কি?
- তাজহাট জমিদার বাড়ি।
- বংপুর চিড়িয়াখানা।
- প্রয়াস সেনা পার্ক।
- ভিন্ন জগৎ বিনোদন পার্ক।
- চিকলি পার্ক রংপুর।
- কারমাইকেল কলেজ।
- পায়রাবন্দ গ্রাম।
তাজহাট জমিদার বাড়ি
তাজহাট জমিদারবাড়ি বিভাগীয় শহর রংপুরের পুরাণ রংপুর তথা তাজহাটে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক প্রাসাদ যা বর্তমানে একটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পর্যটকদের কাছে রংপুর তাজহাট জমিদার বাড়ি একটি আকর্ষণীয় স্থান। এই জমিদার বাড়িটি রংপুর শহরের অন্যতম একটি প্রাচীন নিদর্শন।প্রাসাদটি মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায় নির্মাণ করেন এবং নিমার্ণ কাজ শেষ করতে প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছিল।
১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জমিদার বাড়ি টি ব্যবহৃত হয় রংপুর হাইকোর্ট তথা বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একটি শাখা হিসেবে। রংপুর শহরের পার্কের মোড় থেকে দেশীয় যানবহনে ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে সহজেই তাজহাট জমিদার বাড়ি ভ্রমণ করে আসতে পারেন।
রংপুর চিড়িয়াখানা
রংপুর চিড়িয়াখানা বিভাগীয় শহর রংপুরে অবস্থিত একটি চিড়িয়াখানার।বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানাটি ২১.৫১ একর এলাকা জুড়ে রয়েছে। চিড়িয়াখানাটি রংপুর পুলিশ লাইন সড়কের পাশে হনুমান-তলা রোডের পূর্ব পাশে অবস্থিত।
রংপুর কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা বিভাগীয় শহর রংপুরের অন্যতম একটি বিনোদন কেন্দ্র। চিড়িয়াখানায় রয়েছে শিশু পার্ক, রেস্তোরা, কৃত্রিম হ্রদ এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও বৃক্ষ ইত্যাদি। চিড়িয়াখানায় জনপ্রিয় টিকিটের মুল্য ২০ টাকা।
প্রয়াস সেনা পার্ক
রংপুর টু বদরগন্জ রোডে ঘাঘট নদীর পাড়ে প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক অবস্থিত। ২০১৩ সালে পার্কটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রায় ১১০০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলে । ঘাঘট নদী পারাপারের জন্য রয়েছে নৌকার। এই পার্ক থেকে উপার্জনের প্রায় ৭৫ শতাংশ চলে যায় প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে। পার্কটির জনপ্রতি টিকিটের মুল্য ২০ টাকা মাত্র। বিভাগী শহর রংপুরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে যেকোনো দেশীয় যানবাহনে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে পার্কে যেতে পারবেন।
বিনোদন পার্ক ভিন্ন জগৎ
রংপুর বিভাগের অন্যতম একটি বিনোদন পার্ক ভিন্ন জগৎ।বিনোদন পার্ক টি রংপুর জেলার গঙাচড়া উপজেলার গঞ্জিপুরে অবস্থিত।জনপ্রতি ভিন্ন জগতের টিকেটের মূল্য ১০০ টাকা।
উত্তর বঙ্গের পর্যটকের বিনোদনের অন্যতম একটি স্থান এই পার্কটি। উত্তর বঙ্গের এই সবুজে ঘেরা পার্কটিতে রয়েছে ‘সোনার তরী’ কমিউনিটি সেন্টার, রেস্ট হাউস ‘ড্রিম প্যালেস’ ও ‘রয়েল প্যালেস’।কৃত্রিম মহাকাশ দেখার জন্য রয়েছে প্লানেটোরিয়াম।
চিকলি ওয়াটার পার্ক
চিকলি ওয়াটার পার্ক বিভাগীয় শহর রংপুরের বিনোদন পার্কগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি]। রংপুর বিভাগীয় শহরে অবস্থিত দৃষ্টি নন্দন একটি বিনোদন পার্ক। বিভাগী শহর রংপুরের হনুমান তলা এলাকায় শত বছর প্রাচীন এই চিকলী বিলে শীতকালীন অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত থাকে। প্রাচীন এই বিলটি সংরক্ষণ করে বিনোদন পার্ক হিসেবে গড়ে তোলে সিটি কর্পোরেশন। এই বিনোদন পার্কটির মূল আকর্ষণ কৃত্রিম ঝরনা। রাতে নানা রঙের আলোর ঝলকানিতে পার্কটির কৃত্রিম ঝড়ণা দেখে চোখ ভরে যায়।
চিকলী বিনোদন পার্কে শিশুদের চিত্ত বিনোদনের জন্য ট্রেন, চরকী, স্পীড বোডসহ বিভিন্ন ধরনের রাইডও রয়েছে। পার্কটির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রথম গেটে জনপ্রতি ২০ টাকা এবং দ্বিতীয় গেটে জনপ্রতি ৩০ টাকা টিকিট সংগ্রহ করতে হয়।
কারমাইকেল কলেজ, রংপুর
বিভাগী শহর রংপুরের লালবাগে অবস্থিত কারমাইকেল কলেজ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যা ১৯১৬ সালে রংপুরের ম্যাজিস্ট্রেট কালেক্টর জে.এন. গুপ্ত প্রতিষ্ঠা করেন। ১০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন এই কলেজটির নামকরণ ” কারমাইকেল কলেজ” করা হয় লর্ড ব্যারন কারমাইকেলের নামানুসারে । কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই উত্তর বঙ্গের শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে ব্যাপক অবদান রেখে আসছে । উত্তর বঙ্গের প্রাচীনতম এই কলেজটি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অধিভুক্ত এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় রেংকিং এ সারা দেশে ৪র্থ তম অবস্থান ধরে রেখেছে।
বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র
রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। বেগম রোকেয়ার বাড়ির পাশে ৩.১৫ একর জমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র। প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
রংপুর কিসের জন্য বিখ্যাত
রংপুর অঞ্চল তামাকের জন্য বিখ্যাত। এই অঞ্চলে উৎপাদিত তামাক দিয়ে সারা দেশের চাহিদা মেটানো হয়। এছাড়াও রংপুরে প্রচুর পরিমাণে ধান-পাট-আলু ও হাড়িভাঙ্গা আম ইত্যাদি উৎপাদিত হয় এবং মুঘল আমল থেকে ৭০০ বছরের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বর্তমানে জিআই পণ্য শতরঞ্চি এই অঞ্চলে বিখ্যাত।রংপুর কে “বাহের দেশ” বলা হয়।
রংপুরের বিখ্যাত খাবার কি
“শোলকা” রংপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার।এই খাবারটি পাট শাক ও সোডা দিয়ে রান্না করতে হয়। “বাহের দেশ” নামে খ্যাত রংপুর ছাড়াও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এই খাবারটির পরিচিতি নেই বললেই চলে।মূলত রংপুর জেলার বেশ কিছু উপজেলায় সুস্বাদু খাবার হিসেবে শোলকা অনেক জনপ্রিয়। টেবিলের খাবার দ্রুত খাওয়ার খ্যাতি রয়েছে এই ঐতিহ্যবাহী খাবারটির অর্থাৎ “শোলকা” দিয়ে খাবার দ্রুত খাওয়া সম্ভব হয় ।
রংপুর বিভাগের জেলা সমূহ
রংপুর বিভাগ ৮ টি জেলা নিয়ে গঠিত। জেলা গুলো হলো:-
- রংপুর।
- দিনাজপুর।
- গাইবান্ধা।
- লালমনিরহাট।
- কুড়িগ্রাম।
- ঠাকুরগাঁও।
- পঞ্চগড়।
- নীলফামারী।
রংপুরের বিখ্যাত ব্যক্তি
- উইলিয়াম বেভারীজ -একজন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ ছিলেন।
- বেগম রোকেয়া-নারী জাগরণের অগ্রদূত। তিনি ১৮৮০ সালে ৯ ডিসেম্বর মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
- মশিউর রহমান – বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী [১৯৭৯]
- হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ – বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও ৬ষ্ঠ সেনাপ্রধান,বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
- আনিসুল হক – একজন লেখক, নাট্যকার ও সাংবাদিক।
- এম এ ওয়াজেদ মিয়া-পরমাণু বিজ্ঞানী ও বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী।
- আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম- বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম প্রধান বিচারপতি ও ৬ তম রাষ্ট্রপতি।
- জি এম কাদের – রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী, হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের ছোট ভাই। তিনি বর্তমানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
- নাসির হোসেন- বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট টিমের একজন সাবেক খেলোয়াড়।
- মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান – বাংলাদেশের ১১তম সেনা প্রধান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
- মোস্তফা কামাল – বাংলাদেশের ইতিহাসে ৯তম প্রধান বিচারপতি।
- শরীফ ইমাম- শহীদ জননী জাহানারা ইমামের স্বামী।
- জাহানারা ইমাম-একজন মহিলা বাংলাদেশী লেখিকা, কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ।
Rangpur
রংপুর একটি বিভাগীয় শহর