লিভার রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার আমাদের পূর্ণ ধারণা থাকা প্রয়োজন। লিভার আবার যকৃত হিসেবে আমাদের কাছে প্রয়োজনীয়। আবার অনেক লিভার কেক কলিজা বলে সম্বোধন করে থাকেন। লিভার হলো মানবদেহের বৃহত্তম অঙ্গ, যা পেটের উপরের ডানদিকে পাকস্থলীর নীচে অবস্থিত। এটি একটি লালচে-বাদামি রঙের গ্রন্থি যা অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।
![]() |
লিভার রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার |
লিভার রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
লিভার মানবদেহের বৃহত্তম গ্রন্থ,মানব দেহের মোট ওজনের আর ৩ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ লিভারের ওজন হয়ে থাকে। লিভারের দুইটি খন্ডে বিভক্ত যা বাম ও ডান অংশ হিসেবে বিবেচিত। লিভারের ভিতরে পিওরস উৎপন্ন হয় যা খাদ্য বিপাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তবে অনেক সময় লিভারের ত্রুটিজনিত কারণে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকি। তবে লিভারের রোগ একদিনে হয়ে থাকে না বরং এটি ৩ মাস থেকে ১ বছর লক্ষণ প্রকাশের পর লিভারের রোগ হিসেবে ব্যাপক আকার ধারণ করে। আসুন আমরা জেনেনি লিভার রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে…
লিভার রোগের লক্ষণ
- লিভারের রোগের কারণে ত্বকের চুলকানি হতে পারে।
- হঠাৎ মুড সুয়িং বা ডিপ্রেশনে এই সমস্যায় আক্রান্ত হলে।
- জন্ডিস হল একটি অবস্থা যা ত্বক, চোখের সাদা অংশ এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লি হলুদ হয়ে যায়। এটি লিভারের কর্মক্ষমতা হ্রাস হওয়ার কারণে ঘটে, যার ফলে রক্ত প্রবাহে বিলিরুবিন নামক একটি হলুদ রঙের রঞ্জক পদার্থের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
- পেটের ডান দিকে ব্যথা লিভারের রোগের একটি সাধারণ লক্ষণ। তবে এটি লিভারের প্রদাহ বা বৃদ্ধির কারণে হতে পারে।
- লিভারের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায়ই ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব হয়। এটি লিভারের কর্মক্ষমতা হ্রাস হওয়ার কারণে শরীরের বিপাক এবং পুষ্টির শোষণের কারণে হতে পারে।
- লিভারের রোগের কারণে বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। এটি লিভারের কর্মক্ষমতা হ্রাস হওয়ার কারণে হজমের সমস্যার কারণে হতে পারে।
- লিভারের রোগের কারণে ক্ষুধা হ্রাস পেতে পারে।
- লিভারের রোগের কারণে মল ফ্যাকাশে বা কালো হতে পারে।
- লিভারের রোগের কারণে প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বা বাদামী হতে পারে।
- পা বা গোড়ালিতে ফোলাভাব
- হঠাৎ কোন স্থানে কেটে গেলে সেটি শুকাতে দীর্ঘ সময় লাগা ও সহজে ঘা হওয়া।
- নারীদের মাসিক চক্রে পরিবর্তন।
- খাবারের প্রতি অরুচি বা অনিহা দেখা দেওয়া।
- শরীরের কাঁপুনি দেখা দেওয়া।
লিভারের রোগের প্রতিকার
![]() |
লিভারের রোগের প্রতিকার |
০১. দ্রুত লিভার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তারপর পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।
০২. আপনি যদি হেপাটাইটিস বি এর টিকা নিয়ে থাকেন তাহলে অনেকটাই লিভারের রোগ থেকে দূরে দূরে থাকবেন।
০৩. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পানিতে ভিজিয়ে সেবন করুন।
০৪. দিনে চারটি থেকে ছয়টি আমলকি খেতে হবে। তাহলে লিভার বা যকৃত অনেকটা ভালো থাকে। কারণ আমলকিতে ভিটামিন বি থাকে।
০৫. অ্যান্টিসেপপটিক উপাদান থাকে হলুদে। সেহেতু খাবারে বা রান্নায় পরিমাণ মতো হলুদ ব্যবহার করুন।
০৬. পেঁপেকে যকৃত বা লিভার সুস্থতার অন্যতম চাবিকাঠি বলা হয়। প্রতিদিন সিদ্ধ পেঁপে বা দু চামচ পেঁপের রসের সাথে আধা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত লেবুর রসে আপনার সেবন না করাই ভালো। কারণ এতে গ্যাস্ট্রিক আলসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।
লিভার রোগ নির্ণয় করার উপায় কি?
![]() |
লিভার রোগ নির্ণয় করার উপায় কি? |
- SGPT লিভারের রক্ত পরীক্ষা: SGPT লিভারের রক্ত পরীক্ষা হল একটি রক্ত পরীক্ষা যা লিভারের কার্যকারিতা এবং ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এই পরীক্ষায় অ্যালানাইন ট্রান্সমিনেজ (ALT) নামক একটি এনজাইম পরিমাপ করা হয়। ALT হল একটি প্রোটিন যা লিভারের কোষগুলি দ্বারা তৈরি হয়। লিভারের কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে, ALT রক্ত প্রবাহে বেরিয়ে আসে।
- লিভার বায়োপসি: লিভার বায়োপসি হলো এমন একটি পরীক্ষা যেখানে লিভারের একটি ছোট অংশ (টিস্যু বা কোষ) বের করে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে লিভারের ক্ষতির ধরন এবং তীব্রতা নির্ধারণ করা যায়।
- ফিব্রোস্ক্যান: ফিব্রোস্ক্যান হল একটি ইমেজিং পরীক্ষা যেখানে লিভারের টিস্যুর স্থিতিস্থাপকতা পরিমাপ করা হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে লিভারের সিরোসিস বা অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি নির্ধারণ করা যায়।
লিভার খারাপ হলে কি করে বুজবো?
![]() |
লিভার খারাপ হলে কি করে বুজবো? |
০১. লিভারের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কারণে দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তিতে ভুগে থাকেন। এছাড়া মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কিছুটা তুলনামূলকভাবে কমে যায় ও মাথাব্যথা হয় দীর্ঘ সময় ধরে কিছুদিন পর পর।
০২. যদি শরীরে চর্মরোগ জাতীয় সমস্যা হয় তাহলে সেটি আপনার চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিত্রান না পান তাহলে আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে আপনার কোন সমস্যা রয়েছে।
০৩. লিভারের আক্রান্ত ব্যক্তিরা অধিকাংশই সময় ধরে অরুচিতে ভুগে থাকেন ও কিছু খেলে তাদের ডানপাশে ব্যথা অনুভব হয়।
০৪. মল ও প্রস্রাবের রং দ্রুত পরিবর্তন হয়।
০৫. জন্ডিস বারবার দেখা দিলে আপনাকে মনে করতে হবে যে আপনার লিভারের সমস্যা হয়েছে।