লিভার নষ্টের লক্ষণ | লিভার সুস্থ্য রাখার ৫টি খাবার

লিভার নষ্টের লক্ষণ গুলো কি? কিভাবে বুঝবেন আপনার লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? লিভার নষ্ট হলে কি করবেন? কেন লিভার নষ্ট হয়? আমাদের প্রত্যেকের এসব বিষয়ে জানা জন্য জরুরি। কেননা লিভার মানব দেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্গান। এটি ভালো না থাকলে শরীরির অন্যান্য অঙ্গ পতঙ্গ গুলোতেও এর খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এবং আয়ু কমিয়ে দেয়।

লিভার নষ্টের লক্ষণ | লিভার সুস্থ্য রাখার ৫টি খাবার
লিভার নষ্টের লক্ষণ | লিভার সুস্থ্য রাখার ৫টি খাবার

তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক লিভার নষ্টের লক্ষণ গুলো কি? কিভাবে বুঝবেন আপনার লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? লিভার নষ্ট হলে কি করবেন? কেন লিভার নষ্ট হয়? এসব বিষয়ে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।

 

লিভার নষ্টের লক্ষণ  কি কি ?

প্রাথমিকভাবে লিভার disease বা symptom বোঝা যায় না। কিন্তু যখন কোন কারণে পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। ঠিক তখনি বুঝা যায় যে আপনি লিভারের সমস্যায় ভুগছেন। লিভার নষ্টের লক্ষ গুলো নিচে তুলে ধরা হলো। যেগুলো থেকে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি লিভার disease এ আক্রান্ত।

 

  • দুর্বলতা লাগা (অর্থাৎ এমন দুর্বলতা যেটা হঠাত দেখা গেছে এবং দীর্ঘ দিন ধরে চলছে)
  • ওজন কমে যাওয়া (শার্ট পেন্ট ডিলে হয়ে যাওয়া বা ওজন মাপার পরে বুঝতে পারে যে ওজন কমে যাচ্ছে)
  • চোখ হলুদ হয়ে আসা
  • পা ফুলে যাওয়া
  • পেটে জল জমা
  • রক্ত বুমি হওয়া (একদিন হলেও দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া)
  • পায়খানা কালো হওয়া (একদিন হলেও দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া)
  • পেট ফুলে যাওয়া
  • পেটের ডান দিক থেকে উপরের দিকে ব্যথা অনুভূতি হওয়া
  • ক্ষুধামন্দা
  • অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠা
  • লিভার চাকা হওয়া
  • লিভার বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
আরো পড়ুন:

 

লিভার নষ্ট হওয়ার কারণ কি ?

লিভার নষ্ট হওয়ার অনেক গুলো কারণ রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য কিছু কারণ নিচে বর্নণা করা হলো:

 

  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
  • ঘুমে অনিয়ম
  • মাত্রাতিরক্ত খাবার-দাবার করা
  • নিয়মিত না খাওয়া
  • অতিরিক্ত ওষুধ সেবন
  • তেলে ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া
  • কেমিক্যাল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
  • মদ্যপান করা
  • স্থূলতা ও ক্যান্সার
  • মানসিক
  • চাপ ধূমপান
  • ভাইরাসের আক্রমণে লিভারে প্রদাহের সৃষ্টি
  • যকৃতে চর্বি জমা
  • শারীরিক পরিশ্রমের অভাব
  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
  • খোলা শরবত বা ফলের রস পান ও
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া ইত্যাদি

০১. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

অর্থাৎ খাদ্যাভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ না থাকা। যখন খুশি যেভাবে খুশি খাবার খাওয়া। খাবার আগে ও পরে সাবান বা হেন্ড ওয়াশ ব্যবহার না করা। এটি লিভার নষ্ট বা খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ।

০২. ঘুমে অনিয়ম

নিয়ম করে না ঘুমানো এবং বিশেষ করে খুব দেরি করে ঘুমাতে যাওয়া বা দেরি করে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। এটাও লিভার নষ্ট হওয়ার জন্য দায়ী। কেননা অনিয়মিত ঘুম বা দেরিতে ঘুম বা জাগ্রত হওয়ার ফলে শারীরিক সাইকেলের সম্পূর্ণ বিপরীত প্রতিক্রিয়া ঘটে। যার খারাপ প্রভাব লিভারে প্রতিফলিত হয়।
 

০৩. মাত্রাতিরিক্ত খাবার দাবার করা

আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন হঠাত করে অনেক বেশি খেয়ে ফেলেন। অর্থাৎ বার বার খাওয়ার পরিবর্তে। দীর্ঘ সময় উপোস করে এক সাথে অনেক বেশি খাবার গ্রহণ করা। যা লিভারের উপর হঠাত চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে ধীরে ধীরে লিভার তার কর্ম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
 

০৪. নিয়মিত না খাওয়া

অর্থাৎ নিজের ইচ্ছে মতো খাবার দাবার করা। কখনও সকালের খাবার দুপুরে। আবার দুপুরের খাবার রাতে। আজ এক সময় খাবার গ্রহন। কাল আরেক সময়। আবার অনেকে সকাল বেলায় খাবার গ্রহণ করতে পছন্দে করেন না। যেটিও লিভার নষ্টের জন্য দ্বায়ী।

 

 

০৫. অতিরিক্ত ঔষুধ সেবন

প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করা। এমন অনেকে দেখা যায়। যারা সামান্য একটু জ্বর বা মাথা ব্যাথা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন শুরু করেন। কিংবা শারীরিক পরিবর্তনের জন্য নানা প্রকার ওষুধ সেবন করা। যেটিও লিভার নষ্টের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গের ক্ষতিসাধন করে।
 

০৬. কেমিক্যাল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া

অনেক সময় আমরা খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য খাবার বিভিন্ন প্রকার ক্যেমিক্যাল প্রসাধনী ব্যবহার করি। কিংবা শাকসবজি ফলমূল তাজা রাখার জন্য কেমিক্যাল সমৃদ্ধ প্রডাক্টের আশ্রয় গ্রহন করা। যা মানব জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
 

০৭. খোলা সরবত বা পনীয় পান করা

আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন ঘর থেকে বের হলেই রাস্তায় খোলা শরবত, ফলের জুস ইত্যাদি খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু আপনি হয়তো এটা জানেন যে, এসব খোলামেলা খাবার দাবার আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর।
 

 ০৮. শারীরিক পরিশ্রমের অভাব

অনেকে আছেন শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যয়াম করত পছন্দ করেন না। সারা দিন অলসভাবে শুয়ে বসে কাটাতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তারা এটা জানে না যে শারীরিক পরিশ্রম মানবদেহের জন্য কতটা জরুরি। কেন না শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে শরীরের নোংরা বর্জ নিষ্ক্রিয়/বের হতে পারে না। যার ফলে লিভারের সমস্যার পাশাপাশি আরোও নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়।
 

 ০৯. প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া

 
মাত্রাতিরিক্তভাবে প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন: চিনি, তেল ও চর্বি দিয়ে তৈরী খাবার, মিষ্টি বা মসলাযুক্ত খাবার, সোডা ও কেমিক্যাল যুক্ত কোমল পানীয়, পোলট্রি, মিটবল ও ফিশ নাগেট
 
ইনস্ট্যান্ট নুডলস ও তরল স্যুপ, ফ্রোজেন ও রেডি খাবার চকলেট এবং মিষ্টি ইত্যাদি। খাবার গ্রহণ লিভারের জন্য ক্ষতিকারক।

 

 

লিভার নষ্ট হলে করণীয়

লিভার যেহেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্গান তাই এটি নষ্ট হলে/কোন Symptom দেখা দিলে দ্রুত এই কাজ গুলো করুন। না হয় আপনি অনেক বড় সমস্যার সম্মুখীন হবেন। আপনার দেহে যদি লিভার নষ্টের লক্ষণ গুলো দেখা দেয় তাহলে প্রথমিক অবস্থায় কিছু ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন।

সবার প্রথমে এটি বুঝার চেষ্টা করুন আপনার মধ্যে লিভার disease এর কোন লক্ষণ আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে সেটি কি তা স্পষ্ট হওয়ার চেষ্টা করুন। এবং জানার চেষ্টা করুন। কেন আপনার লিভার Disease হতে পারে।

 

যদি সঠিক কারণ খুঁজে পান তাহলে তা সমাধানে চেষ্টা করুন। কিন্তু আপনার লিভার যদি গুরুতরভাবে নষ্ট হয়ে যায় যেমন রক্তবুমি বা কালো পায়খানা হওয়া। তাহলে খুবদ্রুত একজন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে ভুলবেন না।

 

লিভার সুস্থ্য রাখার ৫টি খাবার

 


বিশেষজ্ঞদের মতে স্বাস্থ্যকর খাদ্য লিভারকে ভালোভাবে কাজ করতে এবং সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। তাই আমাদের উচিত পুষ্টি সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করা। লিভারকে সুস্থ্য রাখতে যে ৭টি খাবার আপনার খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত তাহলো:

 

সবুজ শাকসবজি

লিভারকে পরিষ্কার রাখা এবং নানাবিদ ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সবুজ শাকসবজি। সবুজ শাকসবজিতে উচ্চমাত্রায় ক্লোরোফিল থাকায় এটি রক্ত থেকে দূষিত পদার্থ শোষণ করে নেয়। যা আমাদের লিভার ও স্বাস্থ্যেকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

লেবু

লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি। যা শরীরে এনজাইমের মতো গুরুপূর্ণ উপাদান তৈরি করে। যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। এর ফলে লিভারের উপরে খাবারের চাপ সৃষ্টিতে বাধা তৈরি হয়। এতে লিভার ভালো থাকে এবং আমরাও সুস্থ্য থাকি। 

 

এছাড়াও লেবুর এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে ১ গ্লাস পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে পান করার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে এর সঙ্গে ১ চামচ মধুও মেশাতে পারেন। এতে লিভার পরিষ্কার ও সুস্থ্য থাকবে।

 

রসুন

রসুনে সেলেনিয়ম ও এলিসিন নামক এক প্রকারের উপাদান রয়েছে। যা লিভারে জমে থাকা টকসিন ও দূষিত পদার্থ অপসারণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কম করে হলে এক কোষ রসুন রাখার চেষ্টা করুন।

 

বাতাবি লেবু/জাম্বুরা

জাম্বুরাতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা লিভারের কার্যক্ষমতাকে স্বাভাবিক ও সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও জাম্বুরাতে থাকা ভিটামিন শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে এবং লিভারকে সুস্থ্য রাখে।

 

আমার শেষ কথা:- 

আশা করি, আজকের পোস্টটি পড়ে আপনেরা বুঝতে পারছেন। লিভার নষ্টের লক্ষণ গুলো কি? কিভাবে লিভারকে সুস্থ্য রাখবেন এবং লিভার নষ্ট হলে কি করবেন এবং কি করবেন না। এরকম আরোও গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।

Leave a Comment