কোন সময় সহবাস করলে সন্তান হয় – গর্ভধারণের জন্য সহবাসের নিয়ম

আসসালামু আলাইকুম সুপ্রিম পাঠক। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় “গর্ভধারণের জন্য সহবাসের নিয়ম”। আলোচনায় থাকছে : বাচ্চা নেওয়ার জন্য সহবাসের উপযুক্ত সময়, বাচ্চার নেওয়ার জন্য সপ্তাহে কয় দিন সহবাস করা উচিৎ,  সহবাসের আগে ও পরের দোয়া, সহবাস করার সময় স্ত্রীর করণীয়,  কোন সময় সহবাস করলে গর্ভধারণের সম্ভবনা থাকে না ইত্যাদি বিষয়। লজ্জা নয়, জানতে হবে।  Bengal Solution BD

বাচ্চা নেওয়ার জন্য সহবাসের উপযুক্ত সময়

মা হওয়া একটি আনন্দ অনুভূতি এবং গর্ববোধ করার করার মত বিষয়। যদি কোনো নারী গর্ভধারণ করতে চান, তাহলে তাকে প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে তার ওভুলেশন সম্পর্কে।  কারণ গর্ভধারণ বিষয়ে সকল সমস্যার সমাধান হচ্ছে ওভুলেশন। ুএকজন নারীর ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নি:সরণ হওয়াকে ওভুলেশন বলে। এই সময় মহিলার শরীর থেকে নির্গত ডিমগুলি পুরুষের বীর্যের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।  এই সময় সববাস করলে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।  যদি কোনো নারী মা হতে না চান, তবে এই সময় সহবাস না করে, গর্ভধারণ কে এডিয়ে চলতে পারেন। 

কোন সময় সহবাস করলে সন্তান হয় - গর্ভধারণের জন্য সহবাসের নিয়ম


যদি কোনো নারী গর্ভধারণ করতে চান, তাহলে তার ওভুলেশনের সময় জানতে হবে।  সব মহিলার ওভুলেশনের সময় একই হয় না।  সাধারনত ২৮ দিনের  মাসিক চক্রে ১৪-১৬ দিনে ওভুলেশন হয়ে থাকে।  তবে সব মহিলার ২৮ দিনে মাসিক চক্র হয় না, সাধারণত ২৬-৩২ দিন হিসেবে মাসিক চক্র হয়ে থাকে। আর ওভুলেশন হয়ে থাকে মাসিকের ১০ তম দিন থেকে ১৯ তম দিন পযন্ত এবং পরের মাসিকের ১২ দিন থেকে ১৬ দিন আগে। 

ওভুলেশন সময়ের লক্ষণ 

  1. হোয়াইট ডিসচার্জ বরাবরের থেকে আলাদা হয়
  2. এই মাসে মহিলা দের শরীরের তাপমাত্রা বেশি হয়। 
  3. যোনি থেকে যে তরল নিষ্কৃতি হয়, তা ঘনঘন হয়ে থাকে। 
  4. এই সময় কিছু মহিলার তলপেট হালকা ব্যথা করে, যা কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা পযন্ত স্থায়ী হয়। 

যারা গর্ভধারণ করতে চান, ওভুলেশনের সময় সহবাস করবেন এবং গর্ভধারণ করতে চান না, তারা এই সময় সহবাস থেকে বিরত থাকুন। 

ইসলামে সপ্তাহে কতবার সহবাস করা উচিত

গর্ভধারণের জন্য সপ্তাহে কয়দিন সহবাস করা উচিৎ, এই সম্পর্কে অনেকেই অজানা।  অনেক ভুল ধারণা আমাদের মধ্যে রয়েছে।  

বিজ্ঞান যা বলে:-

  • প্রতিদিন সহবাস করলে গর্ভধারণে সফল হওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।  যা শতকরায় হিসাব করলে ৩৭% হয়।  
  • একদিন পর পর সহবাস করলেও গর্ভধারণে সফল হওয়ার সম্ভবনা কাছাকাছি থাকে,  যা শতকরায় হিসাব করলে দাড়ায় ৩৩%।  
  • আর সপ্তাহে একদিন সহবাস করলে, গর্ভধারণে সফল হওয়ার সম্ভবনা থাকে মাত্র ১৪%,  যা সবচয়ে কম। 

গর্ভধারণে সফল হওয়ার জন্য একদিন পরপর অথবা প্রতিদিন একবার করে সহবাস করা ভাল। তবে গর্ভধারণের সম্ভবনাময় সময় খুজে বের করে বার বার ঐ সময়ে সহবাস করলে, গর্ভধারণের সম্ভবনা আরো বেড়ে যায়।  

সহবাসের আগে ও পরের দোয়া

আমাদের মুসলমানদের প্রতিটি কাজ ইসলামি বিধান মেনে হওয়া উচিৎ।  পবিত্র আল কুরআন কে একটি পুর্নাঙ্গ জীবন বিধান বলা হয়। 

সহবাসের আগের দোয়া

বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ্-শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ্-শাইত্বানা যা রযাকতানা।  

বাংলা অর্থ:– আল্লার নামে। হে আল্লাহ!  আপনি শয়তান কে আমাদের থেকে দুরে রাখুন এবং আপনি আমাদের যে সন্তান দান করবেন, তার থেকেও শয়তান কে দুরে রাখুন।  

নবি বলেছেন:- যখন তোমাদের কেউ স্ত্রীর সাথে সহবাসের আগে এ দোয়া পড়বে, সহবাসের ফলে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে, শয়তান কখনো সেই সন্তানের ক্ষতি করতে পারবে না, এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হেফাজত করবে। 

সহবাসের শেষের দোয়া 

সহবাস শেষে বীর্যপাতে সময় এই দোয়া পড়বেন। 

বাংলা অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহর!  যিনি পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। 

সহবাসের সময় স্ত্রীর করণীয়

সহবাসের সময় স্ত্রীর অনেক কিছু দায়িত্ব থাকে,  যা স্ত্রী কে পালন করতে হয়। যদি স্বামী সহবাস করার ইচ্ছা পোষন করে থাকে, তাহলে স্ত্রীর উচিৎ স্বামীর ডাকে সাড়া দেওয়া।  কারণ স্বামীরা সহবাস না করে দীর্ঘ সময় থাকতে পারে না। আর নারীরা সহবাস না করেও দীর্ঘ সময় থাকতে পারে।  তাই স্ত্রীর উচিত স্বামীর ডাকে সাড়া দেওয়া এবং স্বামী কে খুশি করে দেওয়া।

আবার যখন স্ত্রীর সহবাস করার ইচ্ছা হবে, যদি স্বামী স্ত্রীর ডাকে সাড়া না দেন, তবে স্তীর উচিৎ স্বামী কে  অনুরোধ করা। স্বামীর কাছে আকুতি মিনতি করা। স্ত্রীর উচিৎ সাজুগুজু করা,  স্বামীকে আকর্ষণ করতে সাহায্য করা। স্ত্রীরা অধিক সময় ধরে সহবাস করতে পারে,  অন্যদিকে স্বামীরা অধিক সময় ধরে সহবাস করতে পারে  না। বীর্যপাত হয়ে গেলেই, স্বামীরা আর সহবাস করতে পারে না। তাই স্ত্রীর উচিৎ অধিক সময় ধরে সহবাস করে, সহবাস সময় টাকে উপভোগ করা। 

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সহবাস

অনেকের ধারণা গর্ভধারনের প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাস সহবাস করা উচিৎ না।  তবে ধারণাটি সঠিক নয়।  আপনার গর্ভাবস্থা যদি স্বাভাবিক হয়ে থাকে এবং স্বাস্থ্য জটিলতার কারণে ডক্টর যদি সহবাস করতে নিষেধ না  করে, তবে গর্ভধারণ অবস্থায় সহবাসে কোনো ঝুঁকি নেই।  গর্ভাবস্থায় সহবাস করে সন্তানের কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভব নেই।  তবে গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক নিয়মে সহবাস না করে, সুবিধা মত অবস্থান পরিবর্তন করে সহবাস করা ভাল।  

তবে কিছু কারণে গর্ভাবস্থায় সহবাস করতে নিষেধ করা হয়:- 

  • যদি একই সময়ে জমজ সন্তান গর্ভে ধারণ করে থাকেন। 
  • যদি কোনো কারণে মাসিকের রাস্তা দিয়ে ভারী রক্তপাত হয়ে থাকে। 
  • যদি গর্ভফুল নিচে থাকে। 
  • যদি প্রসবের আগে পানি ভাঙ্গে। 
  • যদি আগের প্রেগন্যান্সিতে নিধারিত সময়ের আগেই সন্তান প্রসব হয়ে থাকে ইত্যাদি। 

কোন সময় সহবাস করলে সন্তান হয় না

মানসিকের রক্তক্ষরণের দিন থেকে শুরু করে প্রথম সাতদিন এবং শেষের সাতদিন সহবাস করলে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভবনা খুব কম থাকে।  তাই এই সময়কে সহবাসের নিরাপত সময়  বলা হয়।  তবে শুধু সেই নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য,  যাদের মাসিক ২৮ দিন বা ২৬ বা ৩১ দিন অন্তর অন্তর নিয়ম মেনে হয়।  এই সময়ে সহবাস করে সম্ভবনা কম হলেও, একটু থেকেই যায়।  তাই কনডম বা পিল ব্যবহার করা উত্তম।  

আরো পড়ুন:- আল আকসা মসজিদের ইতিহাস, ইসলামি বার্তা

মাসিকের সময় সহবাস করলে বাচ্চা হয় কিনা

হ্যা হয়,  মাসিকের সময় সহবাস করলেও গর্ভধারণের সম্ভমনা থেকে যায়।  অনেকের ধারণা মাসিকের সময় সহবাস করলে গর্ভধারণের কোনো সম্ভবনা থাকে না, তাই কোনো প্রোটেকশন ছাড়াই সহবাস করার ইচ্ছা পোষন করে।  তাদের উদ্দেশ্যে বলি, মাসিকের সময় সহবাস করলে একটু হলেও গর্ভধারণের সম্ভবনা থাকে, তাই কনডম অথবা পিল ব্যবহার করাই উত্তম।  

এই বিষয়ে আরো কোনো প্রশ্ন থাকলে, কমেন্ট করার জন্য অনুরোধ রইল।  ধন্যবাদ সবাই কে!  

Leave a Comment